হজ পালনের নিয়মাবলী পদ্ধতি জানতে চান অনেকেই। ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের জন্য হজ মূল পাঁচটি স্তম্ভের একটি। ইসলামে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর হজকে ফরজ করা হয়েছে। তবে হজ কিভাবে পালন করতে হয় তথা হজ্ব আদায়ের নিয়মকানুন পদ্ধতি সম্পর্কে বেশিরভাগ লোক অজ্ঞাত থাকে। তাদের জন্য আমাদের আজকের প্রতিবেদনটি হল হজ পালনের নিয়মাবলী ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনা।
হজ পালনের নিয়মাবলী
প্রত্যেক স্বাধীণ, প্রাপ্তবয়স্ক, বিবেকবান এবং শারীরিকভাবে সুস্থ সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর হজ পালন করা ফরজ। প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফের সূরা আলে ইমরান ৯৭ নাম্বার আয়াতে বলেন, “মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সমস্যা আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই গৃহে হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য”
নিচে হজ পালনের নিয়মাবলী, পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ইসলামে প্রত্যেকটি কাজ নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতিতে আদায় করতে হয় তেমনইভাবে হজ আদায়েরও রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি। হজ আদায়ের পদ্ধতিসমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো।
১.ইহরাম বাধা : হজ আদায়ের জন্য প্রথমেই ইহরাম বাঁধতে হয়, ঠিক যেমনভাবে নামাজের উদ্দেশ্যে তাহরিমা বাঁধতে হয়। ইহরাম বাধা হজের আনুষ্ঠানিক নিয়ত।
ক) ইহরাম বাধার সময় : হজ পালনের উদ্দেশ্যে আরবি শাওয়াল মাসের ১ তারিখ থেকে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত যেকোনো দিন ইহরাম বাধা যায়। হজের ক্ষেত্রে এই নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময় ইহরাম বাধার নিয়ম নেই।
খ) ইহরাম বাধার নিয়ম : ইহরাম বাধার আগে ইহররমের পোশাক পরতে হবে তারপর কিবলামুখী হয়ে সরবে তালবিয়া পাঠ করবে। এভাবে করে হজে পালনের প্রথম কাজ এ ইহরাম বাধার কাজ শেষ করতে হবে।
তাওয়াফে কুদুম ( আগমনী তাওয়াফ) হজ পালনের নিয়মাবলী
ইহরাম বাধার কাজ শেষ হলে মক্কা পৌঁছে কাবা ঘরের চারপাশে তাওয়াফ করতে হয়। অর্থাৎ কাবা ঘরের চারপাশে ৭ বার ঘুরতে হয়। হজের উদ্দেশ্যে মক্কায় পৌঁছানোর পর হাজীগণের এটি প্রথম তাওয়াফ। তাই এই তাওয়াফকে আগমনী তাওয়াফ বা তাওয়াফে কুদুম বলা হয়। তাওয়াফ শুরু করতে হয় হাজরে আসওয়াদ হতে।
৩.সাঈ করা : তাওয়াফ কুদুম শেষ করে কাবা ঘরের নিকটে অবস্থিত সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝের পথটি ৭বার অতিক্রম করতে হয়। একে বলা হয় হজের উদ্দেশ্যে সাঈ করা করা। হজের উদ্দেশ্যে সাঈ করার ক্ষেত্রে সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করে মারওয়া পাহাড়ের শেষ করতে হয়।
সাঈ করা শেষ হলে ইহারাম বাধা অবস্থায় জিলহজ্ব মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে যতবার ইচ্ছা নফল তাওয়াফ করা যায়।
জিলহজ্ব মাসের ৭ তারিখ : জিলহজ্ব মাসের ৭ তারিখে জোহরের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেন। এই খুতবাই ইমাম হজ সম্পর্কিত পরবর্তী প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন বর্ণনা করেন
জিলহজ্ব মাসের ৮ তারিখ : জিলহজ্ব মাসের ৮ তারিখে সূর্যোদয়ের পর হাজীগণ পবিত্র মিনায় আসেন। এক্ষেত্রে হাজীগণ পবিত্র মিনায় যাওয়ার পূর্বে সুন্নাত অনুযায়ী গোসল করে ইহরামের চাদর পরে মসজিদুল হারাম শরীফে আসেন। এরপর ইহারাম ও নিহতের সাথে সাথেই তালবিয়া পাঠ করতে করতে পবিত্র মিনাই যেতে হয়। পবিত্র মিনায় পরের দিন পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নাত।
জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ | হজ পালনের নিয়মাবলী
জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ আরাফার দিন। এদিনের শুরুতে সবাই আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের উদ্দেশ্যে মিনাই ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফার ময়দানের দিকে রওনা দেয়। আরাফার ময়দানে ইমামের পিছনে যোহরের ওয়াক্তে একই সাথে যোহর ও আসরের নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজ আদায়ের পূর্বে ইমাম সাহেব খুতবা দেন।
এই খুতবায় হজের পরবর্তী নিয়মকানুন বর্ণনা করা হয়। আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের ফরজ কাজ। ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের সাথে সাথে আরাফার মাঠ থেকে মুযদালিফায় ফিরে আসতে হয়। মুজদালিফায় পৌঁছে এশার নামাজের সময় মাগরিব ও এশা একসঙ্গে আদায় করতে হয় এবং ৯ জিলহজ দিবাগত রাত মুযদালিফায় অবস্থান করতে হয়।
জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ | হজ পালনের নিয়ম
জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ সকালে সূর্যোদয়ের পূর্বে হাজীগণ মিনার পথে রওনা হন। মিনায় যাওয়ার পথে এক স্থানে শয়তানের প্রতিকৃতি হিসেবে তিনটি পাকা স্তম্ভ আছে। সেখানে পৌঁছে স্তম্ভর দিকে লক্ষ্য করে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করতে হয়। ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে জানা যায় হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আল্লাহর নির্দেশে তার প্রাণ প্রিয় পুত্র ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরবানী করতে যাচ্ছিলেন তখন শয়তান পিতা পুত্রের মনে সংয়ের সৃষ্টি করে তাদের বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করেছিল।
তখন তারা বিরক্ত হয়ে শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন। সেই ঘটনাকে স্মরণ করে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও নিষ্ঠার প্রতি সম্মান দেখিয়ে হাজিগঞ্জ এই কংকর নিক্ষেপ করে থাকেন। শয়তানের প্রতিকৃতিতে কংকর নিক্ষেপের পর মিনাতেই কুরবানী করতে হয়। কুরবানীর পর হাজীগণ মাথামুণ্ডুন করে। নিয়ম আছে যে মেয়েদের ক্ষেত্রে চুলের অগ্রভাগ কিছুটা কাটলেও হয়ে যাবে।
জিলহজ্ব মাসের ১১ ও ১২ তারিখ | হজ পালনের নিয়ম
এরপর জিলহজ মাসের ১১ কিংবা ১২ তারিখে মক্কায় ফিরে পুনরায় কাবাঘর তাওয়াফ করতে হয়। এই তাওয়াফ কে তাওয়াফেজ জিয়ারত বলে।এটি হজের একটি ফরজ কাজ। এরপর ১১ ও ১২ তারিখ দুপুরের পরবর্তী সময়ে মিনার তিনটি স্তম্ভের প্রতিটিতেই সাতটি করে কংকর মারতে হয়। এরপর যদি কেউ মিলাই থেকে যান তবে তিনি 13 তারিখ দুপুরের পর তিনটি স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরে যেতে পারেন। যারা বহিরাগত তাদের জন্য সর্বশেষ কাজ হচ্ছে বিদায়ী তাওয়াফ করা। এটিকে তাওয়াফুল বিদা বলা হয়। এভাবে হজ সমাপ্ত হয়।
হজের ফরজ কয়টি | হজের ফরজ সমূহ
হজের ফরজ ৩টি। যে তিনটি কাজ হজ্জ পালনের অবশ্যক অর্থাৎ যে ৩টি কাজ বাদ পড়লে হজ বাতিল হয়ে যাবে সেগুলি হজের ফরজ নিচে হজের ফরজ গুলি বলা হলো।
১.হজের নিয়তে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে ইহরাম বাধা
২.আরাফার ময়দানে ৯ জিলহজ তারিখে অবস্থান করা
৩.কাবা ঘর তাওয়াফ যিয়ারত করা
হজের ওয়াজিব কয়টি | হজের অজিত কাজ সমূহ
হজের অজিত কাজ সাধারণত ৫টি। হজের পাঁচটি অজিত নিচে দেওয়া হল
১.আরাফার ময়দান হতে প্রত্যাবর্তনের সময় মুযদালিফায় অবস্থান করা
২.সাফা ও মারওয়া পাহাড় দ্বয়ের মাঝখানে দৌড়ানো
৩.শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা
৪.মাথামোড়ানো বা চুল ছাটা
৫.মক্কার বাহিরাগত হাজীদের জন্য বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।
হজের ফজিলত ও তাৎপর্য | হজ পালনের নিয়মাবলী
ইসলামের প্রতিটি ফরজ ইবাদতের যথেষ্ট গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। তেমনইভাবে হজ একটি ফরজ ইবাদত হিসেবে রয়েছে অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত। হজের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ” যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ জিয়ারতে এসে, কোন অশ্লীল কাজ করলো না, আল্লাহর অপছন্দনীয় কোন কাজে লিপ্ত হলো না, সে গুনাহ বা পাপ থেকে এমনভাবে পবিত্র হয়ে ফিরল যেমন সে পবিত্র ছিল সেদিন, যেদিন সে তার মায়ের পেট থেকে জন্মগ্রহণ করেছিল। “( বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরো বলেন, ” তোমরা হজ ও উমরাহ পর পর করতে থাকো। কারণ এ দুইটি ইবাদত দারিদ্র অভাব এবং গুনাহগুলোকে এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন আগুনের ভাটি লোহা সোনা ও রুপার ময়লা দূরীভূত করে তা বিশুদ্ধ করে দেয় হজে মাবরুবের প্রতিদান হচ্ছে একমাত্র জান্নাত ” (নাসাঈ)
আশাকরি হজ পালনের নিয়মাবলী এবং হজ পালনের নিয়ম সম্পর্কে ভাল ধারনা পেয়েছেন আরো নিছু জানতে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আরো পড়ুন: দ্রুত মন ভালো করার ১০ উপায়
( সবার আগে সঠিক তথ্য পেতে ফলো করুন আমাদের Google News, পেজ)