বাংলাদেশের মানুষ খিদে পেলে চা খাই এটা আধুনিক প্রবাদ , সকাল, বিকাল সন্ধ্যা সব সময়েই চায়ের দোকানে মানুষের আনাগোনা, চা খেলে মানুষের মেজাজ যেন ফ্রেশ থাকে , ক্লান্তি দুর হয়, এদেশের মানুষের মাঝে আছে চায়ের প্রতি দারুণ আকর্ষণ, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে চা’য়ে আছে ক্যান্সার প্রতিরোধের গুণাগুন – আপনি চা এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কতটুকু জানেন ?
চা এর উপকারিতা ও অপকারিতা
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চা খুবই ভালো কাজ করে, চা এর পুষ্টিগুণ সামান্য হলেও এটা মানবদেহের জন্য দরকারি কারণ চা’য়ে আছে পলিফেনলস, ফ্লাভোনয়েডস এবং ক্যাটেচিন আর এই দুই উপাদানের মধ্যে পলিফেনলস এবং ক্যাটেচিন ফ্রি রেডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেই যা কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
আর এই কারণে চা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে। চা’য়ে উপস্তিত পলিফেনলসের পরিমাণ ২৫% এর বেশি যেটা মানবদেহে অভ্যান্তরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ত্রনে সাহায্য করে।
চা’য়ে ৭% থিওফাইলিন ও থিওব্রোমিন রয়েছে যেটা শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির জন্য অনেক উপকারি, চা অয়ান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হলেও এতে রয়েছে ক্যাফেইন নামক উত্তেজক পদার্থ যেটার কারণে ঘুম কম হয়। সাধারণ ভাবে যদি দেখি এক কাপ চা’য়ে আছে ৩০ থেকে ৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও এক কাপ কফিতে আছে ৮৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন।
ক্যাফেইনের কারণে ঘুম কম হয় তা শুধু না হজমের ব্যঘাত ঘটাতে ক্যাফেইন কাজ করে, সুতরাং পরিমাণ ও সময় বুঝে চা খেতে হবে। ক্যাফেনের একটা ভালো দিকই ও আছে যেটা আমাদের পেশি ও হৃদপিন্ড সতেজ রাখতে সহায়তা করে।
চা এর উপকারিতা
চা আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী , ঘরে চা বানিয়ে খাই, চায়ের দোকানে যেয়ে চা খাই, কিন্ত চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা তাই জেনে নিন চায়ের উপকারিতা কি কি – ফিগার ঠিক রাখতে অনেকে গ্রীন টি খান জদিও আগে গ্রীন টি ওসুধ হিসাবেই চলছিলো।
জাপানে একটি গবেষণাতে দেখা গেছে যারা সারাদিনে দুই কাপ গ্রীন টি পান করেন তারা মানসিক ভাবে অনেক বেশি ফিট, সবুজ চায়ে আছে অনেক গুণ যেমন গ্রীন টি তে আছে ভিটামিন, এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেটা মানবদেহের জন্য প্রয়োজন।
নিয়মিত সবুজ চা পান করলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি অনেকটা কমিয়ে দেই। এ ছাড়াও গ্রীন টি উপকারিতা চা এর উপকারিতা হলো এটা হার্টের জন্য উপকারি, গ্রীন টি হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমিয়ে দেই, রক্তে কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমায় ও ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।
চা এর উপকারি উপাদান
চা এর উপকারিতা – চা’য়ে আছে এপিগ্যালোক্যাটেচিন-গ্যালেট ইজিসিজি নামের এক রাসায়নিক পদার্থ যেটা বেশ কার্যকর অ্যান্টি-অ্যাকসিডেন্ট যেটা ভিটিমিন সি-এর চেয়েও ১০০ গুণ বেশি ফলদায়ক। এটা ডিএনএ সেলকে এমনভাবে সুরক্ষা দেয় যেন ক্যান্সারের প্রাভবে এর রুপান্তর না হয়।
- গ্রীন টি তুলনামূলক লাল চায়ের থেকে ভালো কারণ এই চা পাতা সুধুমাত্র ভাপে সেদ্ধ করে শুকিয়ে তৈরি করা হয়।
- গ্রীন টির ইজিসিজির ইউরোকিনেজ নামের এনজাইম তৈরিতে বাধাদেই , এই এনজাইম ক্যান্সারের কোষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- চা শুধু বেশি উপকারী , ডাক্তারা কম হাল্কা লাল চা খেতে বলেন যদি চিনি প্রয়োজন হয় তবে বিকল্প হিসাবে জিরো ট্যাবলেট দিয়ে চা খেতে পারেন।
চা রক্তের কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমায় ও চায়ের লিকার দাঁতের ক্ষয়রোধের সহায়তা করে এবং মাড়ি শক্ত করে, কাটা জাইগায় গ্রীন টির লিকার লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। নিয়মিত চা পান করলে রক্ত চলাচল ভালো হয়, পেট ভালো রাখে এবং মস্তিষ্ক সচল রাখে।
চা এর অপকারিতা মানুষের ভুল ধারণা
চা এর উপকারিতা যেমন আছে চায়ের অপকারিতাও আছে , চায়ের অপকারিতা তুলে ধরতে অনেকে মনে করেন চা খেলে রাতে ঘুম হয়না, চা লিভারের ক্ষতি করে, চা চামড়া কালো করে ইত্যাদি, কিন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে ? চা খেলে কি গায়ের রঙ কালো হয়? উওর না। কারণ মানুষের ত্বকের রঙ কেমন হবে তা নির্ভর করে ম্যালানোসাইট কোষের উপর । চা পান করলে লিভারের ক্ষতি হয়না কিন্ত মনে রাখা ভালো অতিরিক্ত চা পানে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত চা পানে অবসাদ ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, তাই পরিমাণ মেনে চলতে হবে ।
কখন চা পান করা উচিত
চায়ের ভালো দিক ধরে রাখতে সঠিক সময়ে চা পান করতে হবে। আমরা সাধারণত সকালের নাস্তা খেয়ে চা পানি আবার সকালে খালি পেটেও চা খায়, আবার দুপুরে খাবার পরও চা পান করি, কিন্ত এটা সঠিক না, আমাদের এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
খাওয়ার আগে চা খাওয়া এবং খাওয়ার পরপরই চা খাওয়া আমাদের খাবার হজমে বাধাগ্রস্ত করে, খাবার থেকে সব পুষ্টি গুণ থেকে বঞ্চিত হয়। তাই খাওয়ার এক ঘন্টা আগে চা পান করতে হবে অথবা খাওয়ার এক ঘন্টা পর।
খাবার খাওয়ার সাথে সাথে চা পানের অসুবিধা
খাবার খাওয়ার পরপরই যদি আমরা চা পান করি তাহলে সেটা আমাদের জন্য উলটো হতে পারে কারণ চা খাবার থেকে আয়রণ শোষণ করে, কারণ চা কফিতে আছে পলিফেন জেস্টানিন নামক উপাদান যেটা আয়রণ শোষন করে বা জেস্টানিনের সঙ্গে আয়রণ মিশে শরীর থেকে বের হয়ে যায় ।
- চা শরীরের থায়ামিন বা ভিটামিন বই শোষন রোধ করে যা বেরিবেরি রোগের অন্যতম কারণ।
- চা খাবার থেকে ভিটামিন ও আমিষ শোষণ করে এবং শরীর এই খাবার গুলো হজম করতে পারেনা।
- চায়ের অ্যাসিডিয়াম টেনিকামস জেসথিওফিলিনস নামক উপাদান রয়েছে যেটা পাকস্থলি হজম পক্রিয়া ব্যাহত করে।
আরো পড়ুন: দ্রুত মন ভালো করার ১০ উপায়।
সঠিক সময়ে চা পান করা
খাবার খাওয়ার কমপক্ষে আধঘন্টা আগে এবং আধাঘন্টা পরে চা পান করুন, সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবার খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে এবং ১ ঘন্টা পর চা পান করতে হবে।
( সবার আগে সঠিক তথ্য পেতে ফলো করুন আমাদের Google News, পেজ)